Sunday, May 19, 2024
Homeপুরাতন রোগসাদা স্রাব এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

সাদা স্রাব এর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

সাদাস্রাব কিঃ

লিউকোরিয়া বা সাদা স্রাব হলো স্ত্রীলোক দিগের একপ্রকার যোনি স্রাব বা Vaginal discharge. এটি সাধারণত সাদা রংয়ের এবং কখনো কখনো হলুদ বা সবুজাভ রঙের হয়ে থাকে। স্রাবের পরিমাণ অত্যাধিক হলে তা অনেক সময় পা পর্যন্ত গড়িয়ে পড়ে থাকে। সাদা স্রাব স্ত্রীলোকদিগের একটি স্বাভাবিক শরীরগত প্রক্রিয়া। স্বাভাবিক পরিমাণে সাদা স্রাব যৌনাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা ও আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে যদি এই স্রাব অত্যাধিক পরিমাণে হতে থাকে এবং যদি স্রাবের রং এবং গন্ধের পরিবর্তন হয় তবে তা ইনফেকশন বা অন্য কোন স্বাস্থ্য সমস্যা নির্দেশ করতে পারে। তখন একজন পেশাদার স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী চিকিতসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

লিউকোরিয়ার কারণঃ

লিউকোরিয়া কখনো কখনো স্বাভাবিক আবার কখনো কখনো কোনো সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। যে সকল কারণ থেকে লিউকোরিয়া রোগটি হতে পারে তা হল-

স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনঃ

স্বাভাবিক কোনো কারণ ঘটিত বা মাসিক ঋতুস্রাব কালীন শরীরের বিভিন্ন হরমোনের হ্রাস বৃদ্ধি হয়ে থাকে। তার প্রভাব হিসেবে সাদাস্রাব এর আধিক্য দেখা দিতে পারে।

যৌনাঙ্গের স্বাস্থ্যবিধির অপর্যাপ্ততাঃ

প্রত্যেকের যৌনাঙ্গ সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রক্ষা কর্তব্য। নতুবা নানা প্রকারের ইনফেকশন ঘঠিত কারণ থেকে সাদা স্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই কারণেই সহবাসের পর পরই পানি দিয়ে যৌনাঙ্গ ধুয়ে ফেলা সর্বোত্তম। এছাড়াও প্রস্রাব করার পর প্রস্রাবের অঙ্গ ধুয়ে ফেলতে হবে। অর্থাৎ সর্বদা যৌনাঙ্গ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

ইনফেকশনঃ

বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী বা ছত্রাকের আক্রমণ দ্বারা ইনফেকশন অথবা যৌনবাহিত সংক্রমণ(STD) দ্বারা আক্রান্ত হয়ে লিউকেরিয়া রোগটি হতে পারে।

হরমোনের ভারসাম্যহীনতাঃ

গর্ভাবস্থা, মেনোপজ ইত্যাদি পরিস্থিতিতে শরীরে হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন হয়ে থাকে। এছাড়াও যেকোনো কারণে শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হলে লিউকোরিয়া দেখা দিতে পারে।

গর্ভনিরোধক এর ব্যবহারঃ

জন্মনিয়ন্ত্রণের কিছু পদ্ধতি যেমন Hormonal birth control অথবা Intrauterine device ইত্যাদির ব্যবহার থেকে লিউকোরিয়া রোগটি হতে পারে।

সাদা স্রাব

লিউকোরিয়ার লক্ষণঃ

লিউকোরিয়া রোগটিতে সাধারণত যে সকল লক্ষণ দেখা যায় তা হল-

অস্বাভাবিক যোনিস্রাবঃ সাধারণত সাদা, হলুদ অথবা সবুজ বর্ণের অস্বাভাবিক যোনিস্রাব লক্ষ্য করা যায়। অনেক সময় স্রাব দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে এবং যৌনাঙ্গে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া দেখা দিতে পারে।

চুলকানি এবং জ্বালাঃ স্রাব ক্ষতকারীত্ব স্বভাবের হলে যৌনাঙ্গ হেঁজে যায় এবং সেখানে জ্বালা করে। অনেক সময় স্রাবের ক্ষতকারীত্ব স্বভাবের কারণে যোনিতে চুলকানি হতে দেখা যায়। প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া থাকতে পারে।

যৌনাঙ্গ ফুলে যাওয়াঃ যৌনাঙ্গ ফুলে যেতে পারে বা জ্বালা করতে পারে। যোনি অঞ্চলে প্রদাহ হতে পারে।

তলপেটে ব্যথাঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটিতে তলপেটে ব্যথা থাকতে পারে।

এই অস্বাভাবিক লক্ষণ গুলো ক্রমাগত চলতে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। 

গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাবঃ

অনেক সময় গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাবের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। সাধারণত এই সময়ে ইস্ট্রোজেন হরমোনের বৃদ্ধি ঘটে থাকে। এই হরমোনটির আধিক্য জনিত কারণে লিউকোরিয়া দেখা দিতে পারে। স্ত্রীলোকের স্বাভাবিক সাদাস্রাব এবং গর্ভাবস্থায় অস্বাভাবিক স্রাবের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। এটি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।

স্বাভাবিক স্রাব সাধারণত পাতলা দুধের ন্যায় রং এবং মৃদু গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে। তবে স্রাবের রঙের পরিবর্তন হলে বা তাতে দুর্গন্ধ থাকলে কোন ইনফেকশন আছে কিনা সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে। Yeast infection অথবা Bacterial infection ইত্যাদি থেকে সাদা স্রাবের সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।

সাদা স্রাবের ব্যবস্থাপনাঃ

অল্প পরিমাণে সাদাস্রাব হওয়া এটি স্ত্রীলোকদের জন্য একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এর জন্য দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে এটি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে হলে এবং দুর্গন্ধযুক্ত হলে এবং স্রাবের রঙের পরিবর্তন হলে তার সাথে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া ইত্যাদি থাকলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এর সাথে সাথে বাড়িতে যে সকল নিয়ম পালন করতে হবে তা হল-

১) যৌনাঙ্গ সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সহবাসের পর এবং প্রস্রাব করার পর যৌনাঙ্গ ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

দিনে অন্তত ৩/৪ বার ভালো করে যৌনাঙ্গ ধুতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

২) Breathable  fabrics পরিধান করতে হবে। 

৩) স্রাব বৃদ্ধির মূল কারণ খুঁজে পেলে তা যথা সম্ভব পরিহার করে চলতে হবে।

সাদা স্রাব এর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ

যে যে প্রধান হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সাদাস্রাবের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় তা হলোঃ

সিপিয়াঃ সিপিয়া ঔষধটি প্রায়ই সচরাচর স্ত্রীলোকদের সাদাস্রাবের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শীর্ণ শরীর, বিষন্নতা, সংসারে মন নেই, শীতকাতর রোগী, অর্থাৎ সিপিয়ার ধাতুগত লক্ষণে ঔষধটি প্রয়োগ করলে সাদাস্রাব নিরাময় হবে।

ক্রিয়োজোটঃ সাদাস্রাবে চুলকানি ও ক্ষতকারীত্ব স্বভাবের বৈশিষ্ট্য থাকে এবং ঐ স্রাব যেখানে লাগে সেখানেই চুলকানি ও জ্বালা হয়। ক্রিয়োজোট এর রোগীর অনেক সময় দাঁত পোকায় খাওয়া থাকতে পারে।

এলুমিনাঃ প্রচুর পরিমাণে সাদাস্রাব স্রাব। এত বেশি স্রাব যে পা পর্যন্ত গড়িয়ে পড়ে। স্নানের পরেই স্রাব বেড়ে যায়। রোগী আলু খেতে পছন্দ করে না। এই লক্ষণে এলুমিনা সাদাস্রাব রোগটি আরোগ্য করে থাকে।

সিফিলিনামঃ ইনফেকশন জাতীয় কোন সমস্যা, জরায়ুতে বা যৌনাঙ্গে কোন প্রকার ঘা থেকে রোগটি হয়ে থাকলে এবং রোগটির মায়াজমেটিক উপাদান হিসাবে সিফিলিটিক মায়াজমের ভূমিকা থাকলে সিফিলিনাম ঔষধটি সেখানে খুব ভালো কাজ করবে। এই ঔষধটিরও সাদাস্রাব অত্যন্ত বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। স্রাব পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত গড়িয়ে যায়।

নেট্রাম মিউরঃ এই ঔষধটির রোগী শীর্ণ ও পাতলা গড়নের হয়ে থাকে। রোগীর মাইগ্রেনের মাথাব্যথা থাকতে পারে। রোগীর লবণ খাওয়ার প্রতি আকাঙ্ক্ষা থাকে অত্যাধিক। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে রোগীর। রোগী প্রচন্ড গরমকাতর। রাগ বেশি। এই সকল লক্ষণ বিবেচনা করে নেট্রাম মিউর ঔষধটি নির্বাচন করলে রোগীর সাদা স্রাব অবশ্যই ভালো হবে।

এছাড়াও লক্ষণ বিবেচনায় আরো যে সকল হোমিওপ্যাথিক ঔষধ লিউকোরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতে পারে তা হলো পালসেটিলা, প্লাটিনা, গ্রাফাইটিস, কোনিয়াম ম্যাকুলেটাম, লিলিয়াম টিগ, ইত্যাদি।

বায্য প্রয়োগঃ সাদাস্রাবের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অনেক সময় বাহ্য প্রয়োগের প্রয়োজন হতে পারে। এই সকল ক্ষেত্রে ক্যালেন্ডুলা, হাইড্রাস্টিস,  এচিনেশিয়া ইত্যাদি ঔষধের উল্লেখ করা যায়। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সকল ঔষধ জল, তেল, ভেসলিন, অলিভ অয়েল ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে বায্য প্রয়োগ করলে রোগ দ্রুত আরোগ্য হবে।

আরো পড়ুনঃ
এমিনোরিয়ার বিস্তারিত ৷ এমিনোরিয়ার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

ডাঃ দীপংকর মন্ডল।
রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ।
০২.০২.২০২৪

———————————-

Dr. Dipankar Mondal
Dr. Dipankar Mondal
আমি ডা. দীপংকর মন্ডল। রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথ। যেকোন নতুন ও পুরাতন রোগের চিকিৎসা করার জন্য যোগাযোগ করুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments